MatiharMatihar

    Subscribe to Updates

    Get the latest creative news from FooBar about art, design and business.

    What's Hot

    পুনর্জীবনে ফিরে ॥ নাসরীন জাহান

    মার্চ ১৪, ২০২৫

    জীবিত ও মৃত: রবীন্দ্রদৃষ্টিতে সমাজে নারীর অবস্থান ॥ জান্নাতুল যূথী

    জানুয়ারি ২১, ২০২৫

    বামিহাল সাহিত্য পুরস্কার-২০২৪ পাচ্ছেন ৭ জন

    ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
    Facebook Twitter Instagram
    MatiharMatihar
    • প্রচ্ছদ
    • প্রবন্ধ
    • উপন্যাস
    • ছোটগল্প
    • কবিতা
    • গান
    • সাক্ষাৎকার
    • সমাজচিন্তা
    • অন্যান্য
      • দুস্প্রাপ্য রচনা
      • শিশুসাহিত্য
    Facebook Twitter Instagram
    MatiharMatihar
    Home»প্রবন্ধ»নারী নির্যাতনের ফন্দি-ফিকির ॥ চিত্ত মণ্ডল
    প্রবন্ধ

    নারী নির্যাতনের ফন্দি-ফিকির ॥ চিত্ত মণ্ডল

    মার্চ ৭, ২০২৩
    Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Pinterest Email

    নারী নির্যাতন এখন একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। এই একবিংশ শতকেও নারীকে- না, গরুছাগলের মতো বিবেচনা করা হয়। গণ্য এবং ভোগ্যবস্তু হিসেবে বিবেচনার কারণে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীরা এখনও মেয়েছেলে বা মেয়েমানুষ। এখনও তাঁরা মনুষ্যপদবাচ্য কোনো প্রাণী হয়ে উঠতে পারেনি। একটি মাত্র ক্রোমোসোমের পার্থক্যের কারণে একজন প্রভু এবং অন্যজন তাঁর সেবাদাসী বা পরিচারিকা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। শিক্ষার অভাব এবং আর্থিক স্বনির্ভরতা না থাকার কারণে বেশিরভাগ নারীই এখনও পুরুষনির্ভর। পরনির্ভরতা ও পরজীবীচেতনা তাঁর বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশের পথে অর্গল হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা যুগযুগ ধরে নারীকে বুদ্ধিবিকাশ-এর ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ না দেয়ার ফলে নারীও খড়িরগণ্ডিতে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের বিশিষ্ট প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী ড. আহমদ শরীফ একদা এক প্রবন্ধে জানিয়েছিলেন, ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা সিনসিয়ার বেশি এবং সে-কারণে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের রেজাল্ট ভালো হয়। কিন্তু যে-পরিমানে বিদ্যা হয় সে- পরিমানে বুদ্ধি হয় না। ফলে এঁরা খাঁচাকেই বেশি পছন্দ করে। আর এই খাঁচার বন্দীত্বেই এঁরা প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলে। শিক্ষাহীনতা, পরনির্ভরতা, আর্থিক স্বনির্ভরতার অভাবের কারণেই এঁরা পরজীবী, নির্যাতিতা। দীর্ঘদিনের এই সংস্কার ও অভ্যাস এঁদের নিজস্ব অস্তিত্ব ও সত্তার গভীর বোধ ও চৈতন্যের মাত্রা লুপ্ত করে দিয়েছে। কিছু শুভবুদ্ধিসম্পন্ন পুরুষ, নারীবাদী ও রাষ্ট্রব্যবস্থার কিছু আইন এঁদের পক্ষে দাঁড়ালেও অত্যাচার ও লিঙ্গবৈষম্যের মাত্রা খুব একটা হেরফের হয়েছে বলেও মনে হয় না। নারী নির্যাতনের কারণ, তার মনস্তত্ত্ব কিংবা অত্যাচারের করুণ কাহিনীর প্রেক্ষাপট নিয়ে ভুরিভুরি বৃত্তান্ত রচিত হয়েছে। সেমিনারে, জনসভায়, নারীবর্ষে কিংবা নারীদশকে মাইকে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করা হয়েছে। হচ্ছে। দীর্ঘ তালিকায় লিপিবদ্ধ হয়ে গ্রন্থবদ্ধ হয়েছে বহুকথামালা, চিন্তা, তর্ক, যুক্তি এবং মুক্তির নানা কথা।

    কিন্তু নারীদের সর্ব অধিকার থেকে বঞ্চিত করে গৃহকোণে বন্দী করে দাসত্বের শৃঙ্খল পরিয়ে রাখা হয়েছে। এবং এসব করতে যুগ যুগ ধরে পুরুষশাসিত সমাজ ফন্দি-ফিকির এবং কলাকৌশলের দীর্ঘ তালিকা বানিয়ে ফেলেছেন।

    সমাজ ক্রমশ এগুচ্ছে। নারীসমাজ সচেতন হয়ে উঠছেন দিনদিন। শিক্ষার আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে তাঁদের চোখে মুখে। নারী মুক্তির ঢেউ উঠেছে প্রাচ্যে-পাশ্চাত্যে, তা সত্ত্বেও বিশ্বের এই অর্ধেক আকাশ এখনও অন্ধকারে নিমজ্জিত। লক্ষ্য করা গেছে, জন্মের পরে প্রায় ৯৮ শতাংশ মেয়েকেই তৈরি করা হয় গৃহবধূরূপে, শিশুকন্যাকে টিপ পরিয়ে, চুলে ঝুঁটি বেঁধে তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়, সে নারী হওয়ার জন্যেই জন্মেছে। পরের ঘরই তাঁর নিয়তি। পুরুষের জন্য তৈরি করা হয় তাঁর শরীর। অজাতযোনী সেই শিশু সযত্নে রক্ষা করে তাঁর কৌমার্য পুরুষের ভোগের জন্য। একদিন সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে সে চলে যায় পরের ঘরে। মৃত্যু অবধি তাঁর নিজের কোনো ঘর হয় না। বাকি ২ শতাংশের ১ ভাগ লড়াই করে একটা পর্যন্ত উঠলেও সামাজিক ঘেরাটোপে তাঁকে সাপলুডুর মতো নামিয়ে আনে একদম সমতলে। রণেভঙ্গ এই নারী বিপর্যস্ত হয়ে দাসে রূপান্তরিত হয়। বাকি এক শতাংশ বহু লড়াই শেষে, বন্ধু- পুরুষের সহায়তায়, নানা ঘাটের জল ছেনে ছেনে একদিন সেলিব্রেটি হয়ে ওঠেন, নারীমুক্তির কথা বলেন। কিন্তু এসব সত্ত্বেও নারীদের ওপর থেকে প্রভুত্বের ও অত্যাচারের ও লিঙ্গ- বৈষম্যের মাত্রা খুব একটা কমে না। একথা সত্য যে, বিগত কয়েক দশক ধরে মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মানবাধিকারের সীমানাটা বেশ কিছুটা চওড়া হয়েছে। কিন্তু এরই পাশাপাশি নারী নির্যাতনের রেখাচিত্র দীর্ঘায়িত হয়েছে। অত্যাচারের মাত্রা বেড়েছে, গতিবেগ সঞ্চারিত হয়েছে। উন্নত এবং উন্নয়নমুখী — সবধরণের দেশেই নারী নির্যাতন যেন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে পড়েছে। ১৪০০ সালে আনন্দবাজার পত্রিকার (৭২ বর্ষ ৩৫২ সংখ্যা রবিবার ২২ ফাল্গুন) নারী নিগৃহ অব্যাহত’ শিরোনামে যে সম্পাদকীয়টি প্রকাশিত হয়েছিল, আজও নারী নির্যাতন সম্পর্কে তা সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। নির্যাতনের সেই ধারা, ব্যাপকতা এবং নির্যাতন সম্পর্কে যে উদ্বেগ ঐ নিবন্ধে প্রস্ফুটিত, তা এতদিনে এতটুকু কমেছে বলে মনে হয় না :

    নারী নিগ্রহ অব্যাহত
    নারী নিগ্রহের ঘটনা বাড়িয়া চলিয়াছে। ইহা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। নারী স্বাধীনতা এবং নারীনিগ্রহের প্রতিকারের দাবিতে আন্দোলন, আলোচনাচক্র, কমিশন, সেল ইত্যাদির অভাব নাই। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের একটি করিয়া মহিলা শাখা সংগঠন আছে। নারীর প্রতি বঞ্চনা ও বৈষম্যের বিশ্লেষণ করিয়া ভারী ভারী কেতাব লেখা হইতেছে, সেমিনারে গবেষণাপত্র পঠিত হইতেছে। নারী নিগ্রহ কিন্তু সেই অনুপাতে কমিতেছে না, বরং বাড়িয়া চলিয়াছে। দেখিয়া শুনিয়া মনে হইতে পারে, নারীর প্রতি বঞ্চনা বৈষম্য বা পীড়নের বিরুদ্ধে জনমত সেভাবে জাগ্রত হইতেছে না এবং এ ব্যাপারে যেসব আন্দোলন বা আলোচনা চলিতেছে তাহা অন্ধকারে মাথা খুঁড়িতেছে, বৃহত্তর বহুজনসমাজকে তাহা স্পর্শ করিতেছে না। তাহা যদি না হইবে, তবে কেন মহানগরীর প্রকাশ্য রাজপথে প্রৌঢ়া বিধবাকে বিবস্ত্র করিয়া প্রহার করা হয় এবং প্রতিবাদ করিতে কেহ আগাইয়া আসে না?

    মানসিক রোগের আবাসিক হাসপাতালে, দৃষ্টিহীনদের স্কুলে, আবাসে মেয়েদের ওপর যৌন অত্যাচার চলে।

    মহিলা কমিশনের বক্তব্য নারী নির্যাতন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ গুরুপাপে নিগ্রহকারীর লঘুদণ্ড। কখনও জোরালো সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে, কখনও বা নিগ্রহকারীর অর্থবল বা সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিপত্তির কারণে প্রাপ্য কঠোর শাস্তি অপেক্ষা অনেক সহজে অপরাধীরা পার পাইয়া যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে লোকলজ্জা বা সামাজিকভাবে কলঙ্কিত ও একঘরে হইবার ভয়ে নিগৃহীত নারীরা নীরবে অপমান-লাঞ্ছনা হজম করাই শ্রেয় মনে করেন। পুরুষতান্ত্রিক ভারতীয় সমাজে কলঙ্ক এখনও নিগৃহীতা নারীর গায়েই লাগে, নিগ্রহকারী পাষণ্ড পুরুষের গায়ে নয়। নারীর মর্যাদারক্ষাকারী সংগঠনগুলিও এ ব্যাপারে যথেষ্ট উদাসীন। নিগৃহীতা নারী নির্দিষ্ট অভিযোগ লইয়া নিজে আগাইয়া না আসিলে রাজ্য সমাজ কল্যাণ পর্যৎ কোনও মামলা গ্রহণ করেন না। যেন কোনও ধর্ষিতা নারীর পক্ষে স্বতঃপ্রণোদিত হইয়া আপন লাঞ্ছনার কথা বলিয়া বেড়ানো কিংবা প্রকাশ্য আদালতে দাঁড়াইয়া হলভর্তি উৎসুক বহিরাগতদের কাছে লাঞ্ছনার কাহিনী পূর্বাপর বিবৃত করা এই সমাজে খুব সহজ ব্যাপার। একদিকে শুরু অপরাধে লঘু শাস্তি, অন্যদিকে অপরাধীকে আদৌ কাঠগড়ায় তুলিতে না পারা নারীনিগ্রহকারীদের উত্তরোত্তর সাহসী ও উদ্ধত করিয়া তোলে। তবে এ ধরনের অপরাধীরা কোনও বিশেষ গোত্রের কোনও বিশেষ মানসিক বিকৃতিসম্পন্ন লোক নয়, ইহারা এই সমাজেরই ফসল এবং আমাদের সকলের নিহিত অন্ধকারেই কমবেশি এই প্রবণতা লালিত হয়। এদেশের বিচিত্র সমাজে ক্ষয়িষ্ণু সামন্ততন্ত্র ও আগ্রাসী বৈশ্যতন্ত্র আনুষঙ্গিক মূল্যবোধ এমনভাবে মিশিয়া আছে যে নারীকে এখানে একইসঙ্গে ক্রীতদাস এবং ভোগ্যপণ্য উভয় বর্গ হিসাবেই শোষণ করা হয়। একদিকে নারী সন্তান উৎপাদন যন্ত্র, পুরুষের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী প্রজননের মাধ্যম, পেটভাতায় বিনা বেতনের গৃহপরিচারিকা, অন্যদিকে তাহাকে মোহিনী ভাবে চিত্ৰত সজ্জিত করিয়া পুরুষের ভোগসুখের উপকরণ হিসাবে তুলিয়া ধরার প্রবণতা। বিপরীতধর্মী এই দুই দৃষ্টিভঙ্গির মিশ্রণই নারীর বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধগুলির মূলে সক্রিয়। বধূহত্যা ও নারীনিগ্রহের ঘটনাগুলি যদি সামন্ততান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিজনিত অপরাধ হয়, শ্রীলতাহানি ও ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলি তবে ধনবাদী সমাজের ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ।

    একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৮ সেকেন্ডে একজন করে মেয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। প্রতি ৬ মিনিটে ধর্ষিতা হচ্ছে একজন। ভারতে প্রতিদিন পণের বলি হয় ৫ জন করে নারী। প্রতি চুয়ান্ন মিনিটে ধর্ষিতা হয় একজন অর্থাৎ একদিনে সাতাশ জন। ২০০২ সালের এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে যে, এই সংখ্যাটি বেড়ে ২৪ ঘণ্টায় ধর্ষিতার পরিমান ৪২ জন। প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশেও নারী নির্যাতনের চিত্রটি আরো ভয়াবহ।

    পশ্চিমবঙ্গের ছবিটিও কম উদ্বেগের নয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পশ্চিমবঙ্গে নারী নির্যাতনের ক্রমবর্ধমানতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে তা নিরশন করার জন্য বৈঠক করেছেন। সংবাদ মাধ্যমের এই খবর নারী নির্যাতনের অব্যাহত গতির কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।

    ১৯৯২ সালে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে ১৮শ এবং ধর্ষণের ঘটনা প্রায় হাজার খানেক।

    ১৯৯৮ সালে পশ্চিমবঙ্গে উত্তরাঞ্চলের তিনটি জেলার নারী নির্যাতনের যে পুলিশী পরিসংখ্যান মিলেছে, তা থেকে নারী নির্যাতনের ক্রমবর্ধমান সংখ্যাই পরিদৃশ্যমান হয়ে ওঠে।

    ১৯৯৬ সালে দার্জিলিং জেলাতেই নারী হেনস্থার ঘটনা ঘটেছে ১৭৪টি; কোচবিহারে এর পরিমান ছিল ১৩১টি এবং জলপাইগুড়িতে ৩০৭টি। ১৯৯৭ সালে উত্তরাঞ্চলের এই তিনটি জেলায় নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ৩২৫টি। তবে একথা স্বীকার করতেই হবে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ কিংবা শ্রীলতাহানীর যত ঘটনা ঘটে, তার সবটা থানায় লিপিবদ্ধ হয় না বলে নারীদের ওপর যৌনহয়রানির পুরো পরিসংখ্যানের চিত্রটি পাওয়া যায় না। এর পেছনে দুটি কারণ কাজ করে :

    ক. সামাজিক কারণেই অনেক victim বা পরিবার এই ধরনের ঘটনার কথা জানাতে কিংবা অভিযোগ লিপিবদ্ধ করতে থানায় আসেন না। পারিবারিক বদনাম বা কলংকের ভয়ে অনেকেই এইসব ঘটনাকে চেপে যান। এঁদের আশংকা জানাজানি হলে যদি মেয়ের বিয়ে না হয় কিংবা বিবাহিতার সামাজিক বা পারিবারিক সংকটের সৃষ্টি হয়।

    খ. তবে সাহস করে অনেকে থানায় অভিযোগ লিপিবদ্ধ করতে এলেও থানা এঁদের ফিরিয়ে দেয়। এফ. আই. আর গ্রহণ করেন না। তবে এটি সত্যি যে, অনুন্নত জেলা থেকে উন্নত জেলাগুলিতে নারী নির্যাতনের পাল্লাটি বেশি ভারী।

    পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় তাই ফন্দি-ফিকিরের অভাব নেই। রাষ্ট্র, ধর্ম এবং পুরুষতান্ত্রিকতা নারীসমাজকে ক্রীতদাসে পরিণত করেছে। বহু নিয়ম, অনিয়ম, বেনিয়ম এবং প্রথা, রীতি, শাস্ত্র এর বেড়াজাল
    দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে মেয়েদের। এই একবিংশ শতকেও পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন। ঘটেছে বলে মনে হয় না। ভাস্বতী চক্রবর্তী তাঁর ‘পথে বিপদে মেয়েদের নিরাপত্তা’ শীর্ষক গ্রন্থে নারী নির্যাতনের বিভিন্ন ফন্দি-ফিকির নিয়ে আলোচনা করেছেন। ভাস্বতী চক্রবর্তীর গ্রন্থে বর্ণিত নারী নির্যাতনের সীমানা এবং মানচিত্রকে খণ্ড খণ্ডভাবে বিন্যস্ত করা যেতে পারে।

    ক. পায়ে চলা রাস্তাঘাট, বাস-ট্রাম, মেট্রোরেল, লোকাল ট্রেন, অটো-রিকশা, শেয়ার- ট্যাক্সি : এসব ক্ষেত্রে যৌননিগ্রহ শারীরিক ও মানসিক। এখানে Molestation-ই বেশি হয়। তবে লোকাল ট্রেন, দূরপাল্লার ট্রেন, ট্যাক্সিতে নারীধর্ষণের সংবাদ ইদানিং গণমাধ্যমে প্রায়শই প্রকাশিত হচ্ছে।
    খ. পুলিশ থানায় হেনস্থা এবং উৎপীড়ন অন্যরকম। সমাজের নানা স্তরের নারীদের এই ব্যাপারে অভিজ্ঞতা প্রায় একইরকম।
    গ. স্কুল-কলেজ, টিউটোরিয়াল হোম অর্থাৎ যেকোনো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানেও সেক্সচুয়াল হ্যারেসমেন্টের হাত থেকে মেয়েদের রক্ষা করার জন্য সেল গঠিত হয়েছে।
    ঘ. হাসপাতালে রোগিনী বা রোগীর আত্মীয়ার ওপর যৌনপীড়নের ঘটনা প্রায়শই ঘটে।
    ঙ. সংশোধনাগারে, ত্রান গৃহে, পুনর্বাসন কেন্দ্রে শ্লীলতাহানি এবং ধর্ষণের ঘটনা সংবাদপত্রে ও গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়।
    চ. মানসিক রোগের আবাসিক হাসপাতালে, দৃষ্টিহীনদের স্কুলে, আবাসে মেয়েদের ওপর যৌন অত্যাচার চলে।

    নারীবাদী আন্দোলনকে অর্থনীতিনির্ভর আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করে নারীসমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রামে নামতে হবে। নারীর ভাগ্য নারীর নিজেকেই গড়তে হবে।

    নারীদের অসহায়তার কারণেই এইসব ক্ষেত্রে যৌননিগ্রহ-এর মত ঘটনা ঘটার সুযোগ। পায়। আসলে পিতৃতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে পুরুষের আনন্দ-এর জন্য নারীকে একটি যৌন সামগ্রী হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এই বিবেচনা থেকে নারীকে ভোগ্যবস্তু হিসেবে জেনে তাঁর ওপর পুরুষেরা অধিকার ফলায়। নারীদের ওপর যৌন-অধিকারের কর্তৃত্ব অর্জনের জন্য পুরুষেরা নীতিগত, অর্থনৈতিক, আইনী এবং এমনকি শারীরিক চাপ ব্যবহার করে। রাশেল তাঁর “The Politics of Rape’ গ্রন্থে বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে, যে মেয়ে-শিশুটি শিশুবয়সে ধর্ষিতা বা যৌননিগ্রহিত হয়েছে তার সৎ পিতার দ্বারা, সেই-ই পরে ধর্মিতা হয়েছেন স্বামীর দ্বারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে। ২০০২ সালে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিসার্চ’ নারীদের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে জানতে পেরেছেন ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় ৫৬

    শতাংশ শিক্ষিতা নারী তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁদের স্বামী কর্তৃক নিয়মিত ধর্ষিতা হন।

    ছ. পাড়ার বৌকে ব্যভিচারিণী সাব্যস্ত করে রাস্তায় নামিয়ে এনে মেরেধরে বিবস্ত্র করে পাড়া ঘোরানো হয়। চুল কামিয়ে, কালি মাখিয়ে জুতোর মালা গলায় পরিয়ে ঢাাড়া পিটিয়ে উল্লাস প্রকাশের নজিরও অজস্র।

    জ. গ্রামের বুড়িকে কিংবা যুবতী বৌকে ডাইনি আখ্যা দিয়ে বুকে পেটে ছুরি মেরে, ক্ষুর দিয়ে কেটে, ঘর থেকে জমি থেকে উৎখাত করা হয়। অবশ্য এসব বেশিরভাগই ঘটে অনুন্নত আদিবাসী সমাজে।

    ঝ. অন্য ধর্মাবলম্বী কিংবা নিম্নবর্গের যুবককে ভালবাসার অপরাধে কিংবা বিয়ে করার। কারণে মেয়েকে যুবকটির সঙ্গে গাছের ডালে ফাঁসিতে লটকে দেয়া হয়।

    ঞ. নিম্নবর্গের দিনমজুর সম্পন্ন উচ্চবর্ণের মালিকের কাছে ন্যায়সঙ্গত ‘রোজ’ চাইলে তাদের বাড়ির মেয়ে-বৌদের ওপর ধর্ষণ বা গণধর্ষণ চালানো হয়।

    ট. স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর সহমরণ প্রথার মাধ্যমে নারী হত্যার নজির আছে ইতিহাসে।

    একালে গুজরাটে রূপ কানোয়ারকে সহমরণে যেতে হয়েছে। আইনী বাধা থাকলেও

    সুযোগ পেলেই এখনও এই অন্ধপ্রথার শাস্ত্রীয় রূপান্তরে নারীকে প্রলুব্ধ ও প্ররোচিত করে হত্যা করে
    পিতৃতান্ত্রিক সমাজ। এছাড়া, কেরোসিন গায়ে ঢেলে পুড়িয়ে মারা হয় নারীকে। অ্যাসিড ছুড়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয় নারীর মুখ ও শরীর। পুরুষের কাছে নারীর শরীরই একমাত্র প্রকাশ। সেকারণে সে অ্যাসিড দিয়ে পুড়িয়ে দেয় নারী-শরীর।

    ঠ. পণ-এর বলি হয় শতশত। নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সমাজে এই দৃষ্টান্ত অজস্র। পণের কারণে পুড়িয়ে মারা হয় নীরবে। তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করা হয়, কখনো খুন করা হয়।

    ড. ইভটিজিং-এর ঘটনা ঘটে নিয়মিত। রকে, প্রকাশ্য রাস্তায়, পাড়ার মোড়ে, ইস্কুল- কলেজের সামনে এসব ঘটে—যৌন উল্লাস, হাত ধরে টানাটানি, অশ্লীল সংলাপ, আচরণ এবং অঙ্গভঙ্গির প্রকাশ ঘটানো হয় মেয়েদের দেখে।

    ঢ. পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীর নিজের শরীর তাঁর নিজের নয়। স্বামী নামক প্রভু তাঁর শরীরের কর্তা। ইচ্ছেমত যখন তখন আইনের অধিকারে সে ভোগ করতে পারে এই দেহ। গর্ভ ধারণের অধিকারও নেই নারীর। এখানেও পিতৃতান্ত্রিকতা। আর এই কারণেই স্ত্রীর ওপর চলে স্বামীর নির্যাতন: মারধোর, মানিসক নিষ্ঠুরতা, বহুবিবাহ, স্ত্রীকে পরিত্যাগ, জোর করে যৌনকর্মে লিপ্ত করা, কথায় কথায় তালাক দেয়া, ফতোয়া জারি করে ধর্মের নামে মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণা, অত্যাচার ইত্যাদি। এছাড়া আছে হিল্লা বিয়ের নষ্টামী।

    ণ. কন্যাভ্রূণ হত্যা বা নবজাতক কন্যা হত্যা ভারতীয় পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় প্রচলিত রীতি। পিতা যেহেতু পুরুষ, সেকারণে সে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হিসেবে চায় পুত্র বা পুরুষ-সন্তান। কন্যা তাই অবাঞ্ছিত।

    ত. কর্মক্ষেত্রে যৌননিগ্রহের ঘটনা ঘটে হামেশাই। স্থূলভাবে এর প্রকাশ ঘটে সবরকম অফিস-আদালত, ছোটবড় কারখানা, ডাকঘর, ডাক্তার বা উকিলের চেম্বার, স্কুল- কলেজ, দোকান ইত্যাদিতে। এইসব ক্ষেত্রে নারীকে যৌন হেনস্থার সম্মুখীন হতে হয়। যৌন হেনস্থা মূলত কাকে বোঝাব? সুপ্রিম কোর্ট এক নির্দেশে যৌন হেনস্থার সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছেন :

    ১। অবাঞ্ছিত শারীরিক সম্পর্ক এমনকী শরীরকে ছোঁয়াও যৌন হেনস্থা
    ২। যৌন সম্পর্কের জন্য দাবি অথবা অনুরোধ জানানো
    ৩। আদিরসাত্মক মশকরা বা মন্তব্য
    ৪। অগ্নীল ছবি দেখানো
    ৫। শারীরিক, বাচনিক অথবা ইঙ্গিতপূর্ণ যৌন আচরণ

    থ. পরিবারের মধ্যেও দেখা যায় রক্তের সম্পর্কের কোনো মেয়ের সঙ্গে যৌন সঙ্গম অথবা অত্যাচার করতে। বাচ্চা মেয়েদের ওপর যৌন উৎপীড়ন তো অহরহই ঘটে।

    দ. মধ্যপ্রাচ্য এবং বাংলাদেশে পাথর ছুড়ে নারী-হত্যা, মুসলিম দেশে অনাচার কিংবা প্রেমের কারণে তলোয়ার দিয়ে মুণ্ডুচ্ছেদ-এর ঘটনা সমাজে বিদ্যমান।

    ধ. পর্দানসীনতার ঘেরাটোপে গৃহবন্দী নারী; নারী বিক্রি, যৌনকার্যে শরীর-ব্যবস্থায় নিয়োগ এক মধ্যযুগীয় প্রথা—একালেও বিদ্যমান।

    পিতৃতন্ত্র নারীকে মানুষ বলেই মনে করে না। নারী ভোগ্যপণ্য। সন্তান উৎপাদনের যন্ত্রবিশেষ। পুরুষনির্ভর সমাজব্যবস্থায় সে পুরুষের হাতের ক্রীড়ণক। পুরুষের যৌন-সুখ এবং আনন্দের জন্যই সে জন্মেছে এই পৃথিবীতে। আর্থিক স্বনির্ভরতা, শিক্ষা এবং আধুনিক মনন নারীকে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে পারে। নারীবাদী আন্দোলনকে অর্থনীতিনির্ভর আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করে নারীসমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রামে নামতে হবে। নারীর ভাগ্য নারীর নিজেকেই গড়তে হবে।

    Featured প্রচ্ছদ
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email

    সম্পর্কিত লেখা

    পুনর্জীবনে ফিরে ॥ নাসরীন জাহান

    মার্চ ১৪, ২০২৫

    জীবিত ও মৃত: রবীন্দ্রদৃষ্টিতে সমাজে নারীর অবস্থান ॥ জান্নাতুল যূথী

    জানুয়ারি ২১, ২০২৫

    বামিহাল সাহিত্য পুরস্কার-২০২৪ পাচ্ছেন ৭ জন

    ডিসেম্বর ২১, ২০২৪

    Leave A Reply Cancel Reply

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    দৃশ্যান্তের পর ॥ মাজরুল ইসলাম

    নভেম্বর ২৪, ২০২৩

    লিওনেল মেসি ॥ প্রিতময় সেন

    নভেম্বর ৬, ২০২৩

    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-মন্বন্তর: নাট্যচর্চায় বিজন ভট্টাচার্য ॥ তপন মণ্ডল

    আগস্ট ৫, ২০২৩

    বসন্ত রাগ ॥ কালিদাস ভদ্র

    জুলাই ১৬, ২০২৩

    একাকীত্বের সব দহন তোমাকে দিলাম ॥ দীপংকর গৌতম

    জুলাই ৪, ২০২৩
    Stay In Touch
    • Facebook
    • Twitter
    • Pinterest
    • Instagram
    • YouTube
    • Vimeo
    Don't Miss

    পুনর্জীবনে ফিরে ॥ নাসরীন জাহান

    ছোটগল্প মার্চ ১৪, ২০২৫

    ফিসফিস ধ্বনি, এই বাড়িডা না? ধুস আওলা ঝাউলা লাগতাছে… লোকটার দুই পা ফেটে রক্ত ঝরছে।…

    জীবিত ও মৃত: রবীন্দ্রদৃষ্টিতে সমাজে নারীর অবস্থান ॥ জান্নাতুল যূথী

    জানুয়ারি ২১, ২০২৫

    বামিহাল সাহিত্য পুরস্কার-২০২৪ পাচ্ছেন ৭ জন

    ডিসেম্বর ২১, ২০২৪

    চিন্তাসূত্র সাহিত্য পুরস্কার গ্রহণ করলেন ৪ গুণীজন

    ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪

    Subscribe to Updates

    Get the latest creative news from SmartMag about art & design.

    সম্পাদক: জান্নাতুল যূথী ইমেইল: jannatuljuthi646@gmail.com

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.