MatiharMatihar

    Subscribe to Updates

    Get the latest creative news from FooBar about art, design and business.

    What's Hot

    পুনর্জীবনে ফিরে ॥ নাসরীন জাহান

    মার্চ ১৪, ২০২৫

    জীবিত ও মৃত: রবীন্দ্রদৃষ্টিতে সমাজে নারীর অবস্থান ॥ জান্নাতুল যূথী

    জানুয়ারি ২১, ২০২৫

    বামিহাল সাহিত্য পুরস্কার-২০২৪ পাচ্ছেন ৭ জন

    ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
    Facebook Twitter Instagram
    MatiharMatihar
    • প্রচ্ছদ
    • প্রবন্ধ
    • উপন্যাস
    • ছোটগল্প
    • কবিতা
    • গান
    • সাক্ষাৎকার
    • সমাজচিন্তা
    • অন্যান্য
      • দুস্প্রাপ্য রচনা
      • শিশুসাহিত্য
    Facebook Twitter Instagram
    MatiharMatihar
    Home»অন্যান্য»মালানিতে: বরফকুচির শুদ্ধজলে ॥ ফারজানা ইয়াসমিন
    অন্যান্য

    মালানিতে: বরফকুচির শুদ্ধজলে ॥ ফারজানা ইয়াসমিন

    মার্চ ২৪, ২০২৩
    Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email
    Share
    Facebook Twitter LinkedIn Pinterest Email

    আমি ফারজানা ইয়াসমিন বাংলাদেশি। বর্তমানে কলকাতার সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটিতে আমি পারফর্মিং আর্টস-এ পিএইচডি করছি। আমার আপু দুলাভাই, তাদের দুই মেয়ে তিশমা, জাইমাসহ রেসিডেন্সি ভিসায় ছয়মাস পরপর দুবাই যায়। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তারা দুবাই ছিলো,জানুয়ারির ১ তারিখ তারা ওমান যায়। একদিন আপু হঠাৎ ফোন করে বলল, ‘আমরা ৫ তারিখ ওমান থেকে দিল্লি যাবো, তুই কলকাতা থেকে দিল্লি চলে আয়।’ আমিও সাথে সাথে অনলাইনে কলকাতা থেকে দিল্লির ট্রেন ৪ তারিখ রাতের জন্য বুকিং দিয়ে দিলাম। ৫ তারিখ সকাল ১১ টায় আমি দিল্লিতে গিয়ে হোটেল আইভিতে উঠে আপুদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। দিল্লিতে প্রচণ্ড রকম ঠাণ্ডা পরেছিল, ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল।

    শীতে আমি কাঁপছিলাম। আমি কলকাতা থেকে যে শীতের পোশাক নিয়ে গিয়েছিলাম, সেগুলো পরেও আমার শীত কমছিলোনা। আপুরা দুপুর ৩টার দিকে হোটেলে আসলো। অনেকদিন পর আপুর পরিবারের সাথে আমার দেখা হলো। খুব ভালো লেগেছিলো আমার,সেই অনুভূতি লিখে বা বলে প্রকাশ করা যাবে না। যাইহোক একদিন আমরা দুইবোন ও তিশমা,জাইমা মিলে ঠিক করলাম বরফ দেখতে যাবো। তো যেই কথা সেই কাজ। গুগলে,ইউটিউবে সার্চ দিয়ে আমরা দেখছিলাম যে,ভারতের কোথায় কোথায় বরফ পড়ছে। দেখলাম যে মানালিতে বরফ পড়ছে। মানালি হলো ভারতের হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের কুল্লু জেলার কুল্লু শহরের কাছে একটি শহর। এটি বিয়াস নদী দ্বারা গঠিত কুল্লু উপত্যকার উত্তর প্রান্তে অবস্থিত। শহরটি কুল্লু জেলায় অবস্থিত, রাজ্যের রাজধানী সিমলা থেকে প্রায় ২৭০ কিলোমিটার (১৭০ মাইল) উত্তরে এবং জাতীয় রাজধানী নতুন দিল্লি থেকে ৫৪৪ কিলোমিটার (৩৩৮ মাইল) উত্তর-পূর্বে।

    কেউই ভালো করে খেতে পারিনি কারণ সবাই অনেক অসুস্থবোধ করছিলো ও খাবারও তেমন মজা লাগেনি। এরপর দেখি আপুর প্রচন্ড জ্বর,মাথাব্যথা।

    যাক,বরফ দেখার জন্য কোথায় যাবো সেই স্থান নির্ধারণ করার পর আমি দিল্লিতে থাকে পরিচিত এক ছোট বোনের মাধ্যমে দিল্লি থেকে মানালিতে যাওয়ার জন্য একটি গাড়ি ভাড়া করলাম। আসা যাওয়ার জন্য ২৪ হাজার ও আগ্রায় যাওয়ার জন্য ৬ হাজার রুপি দিয়ে গাড়ি ভাড়া ঠিক করলাম। ঠিক হলো আমাদেরকে ড্রাইভার গাড়ি দিয়ে প্রথমে আগ্রায় নিয়ে যাবে এরপরে মানালিতে,আমরা হোটেলে একরাত থাকবো,পরেরদিন ড্রাইভার আমাদের মানালির বরফ দেখিয়ে,এরপর কুল্লু দেখিয়ে আবার দিল্লিতে ফেরত নিয়ে আসবে। এরপর চিন্তা আসলো পোষাকের, যেহেতু বরফ দেখতে বরফের মধ্যে যাবো, এরজন্যতো মোটা জ্যাকেট, জুতা কিনতে হবে।

    আপু, দুলাভাই সকাল হতেই ম্যাক্স হাসপাতালে চলে গেলো ডাক্তার দেখানোর জন্য, ওরা চিকিৎসা শেষ করে আসতে আসতে রাত হয়ে যাবে। তো আমি কি করব?আমরা যে হোটেলে উঠেছিলাম সেই হোটেলেই খাবার ওর্ডার করা যায়। সেখানে নাস্তার অর্ডার দিয়ে আমি,তিশমা,জাইমা রেডি হয়ে গেলাম মার্কেটে যাওয়ার জন্য। নাস্তা দিয়ে যেতে অনেক দেরী করেছিলো,তাই আমাদের মার্কেটে যেতে যেতে প্রায় দুপুর হয়ে গিয়েছিলো। আমরা নিউ দিল্লির সরোজনী নগর মার্কেটে গিয়েছিলাম। কেনাকাটা করতে করতে আমরা দুপুরের খাবারও খেতে পারিনি। পরে এতো খিদে লেগেছিল যে, রাস্তার ধারে যেসব খাবার বিক্রি হচ্ছিলো, সেগুলোই আমরা খেলাম।

    কেনাকাটা শেষ হতে হতে রাত হয়ে গিয়েছিলো। মাথা থেকে পা পর্যন্ত সব শীতের ড্রেস কিনে আমরা হোটেলে ফিরে এলাম,খুবই ক্লান্ত লাগছিলো আমাদের। তখনও আপু, দুলাভাই হাসপাতাল থেকে আসেনি। এরপর দোসা,আলু কাবলি,সবজি,ডিম রাতের খাবার নিয়ে আপুরা হোটেলে আসলো। আমরা সবাই রাতের খাবার খেয়ে একটু রেস্ট নিলাম। এরপর রাত ১২টায় গাড়ি আসলো, আমরা সবাই প্রথমে তাজমহল দেখার জন্য আগ্রার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম, দিল্লি থেকে রাত ১২ টায় রওনা দিয়ে সকাল ১০ টায় আগ্রায় পৌঁছালাম। আগ্রায় ঘুরাঘুরি করে দুপুরের খাবার খেয়ে আগ্রা থেকে ৪ টায় বৃন্দাবনে গিয়ে প্রেম মন্দিরসহ আরও অনেক মন্দির ঘুরে দেখতে দেখতে রাত ৮টা বেজে গেলো। এরপরে আমরা হোটেলে গিয়ে রাতের খাবার খেয়ে মানালির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

    গাড়িতে উঠেই আমরা সবাই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম,এরপর হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখি গাড়ি থেমে আছে। গাড়ি আর চলছে না,পাহাড়ের উপরে গাড়ি,চারপাশে পাহাড়,পাহাড়ের মাঝখানে আঁকাবাঁকা একটা মাত্র রাস্তা। আর সেই রাস্তায় একটার পর একটা গাড়ি,অসংখ্য গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে,গাড়ি চলার কোন নাম নেই। পরে আশেপাশে জিজ্ঞেস করে জানতে পারি,রাস্তা মেরামতের কাজ চলছে,তাই গাড়ি চলাচল বন্ধ। শুনেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। তাহলে কি মানালি যেতে পারবোনা? বাস্তবে বরফের দেশ দেখতে পারবোনা? মনের মধ্যে অনেক আশংকা,চিন্তা এসে ভিড় জমলো। যেহেতু আগের দিন রাতে রওনা দিয়েছি সেহেতু সম্পূর্ন রাত গাড়িতে ছিলাম,ভালো করে ঘুমাতে পারিনি রাতে,এরপর দিনেরবেলায় আগ্রা,সন্ধ্যায় বৃন্দাবনে ঘুরে এতো বেশি ক্লান্ত লাগছিলো যে ,শরীর খুব বেশি খারাপ লাগছিল।

    তার ওপর আবার গাড়ি চলাচল বন্ধ। আপু,দুলাভাই,জাইমা খুব অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল। দুলাভাইয়ের ব্যাকপেইন শুরু হয়ে গিয়েছিলো, উনি আর গাড়িতে বসে থাকতে পারছিলেন না। গাড়ি থেকে নেমে পায়চারি করতে লাগলেন। এদিকে রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে গেলো। গাড়ি আর চলছেই না। অবশেষে দীর্ঘ ৪/৫ ঘন্টা পরে রাস্তায় গাড়ি চলতে দিলো। দেহে যেন প্রাণ ফিরে পেলাম। এদিক দিয়ে বৃষ্টি শুরু হলো। গাড়ি ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে। উঁচু নিচু পাহাড়, পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে প্যাচানো রাস্তা। গাড়ি এঁকেবেঁকে সামনের দিকে যাচ্ছে। এবারে মাথা ঘুরানোও শুরু হলো। একে ক্লান্তি,শরীরে ব্যাথা, এরপর আবার মাথা ব্যাথা। সবমিলিয়ে খুব খারাপ লাগছিলো। রাস্তার আশেপাশে কোন বাড়িঘর, দোকানপাট কিছুই ছিলো না। এদিকে বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজনবোধ করলাম আমরা। কিন্তু কোথাও কোন জনমানবের চিহ্নও পাচ্ছিলাম না আমরা। অনেকদূর যাওয়ার পর কুল্লুতে কয়েকটি থাকার জন্য হোটেল দেখলাম,আমরা গাড়ি থেকে নেমে বাথরুমে যেতে চাইলাম। কিন্তু তারা বলল, আগে থাকার জন্য হোটেল বুকিং দিতে হবে তারপর ওয়াশরুমে যেতে দিবে।

    এরপর আবার গাড়িতে ফিরে এলাম। সামনে কয়েকটি খাবারের হোটেল দেখতে ফেলাম। সেখানে একটি হোটেলের মালিক আমাদের বাথরুমে যেতে দিলো,এরপর আমরা ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আবার গাড়িতে উঠলাম। আস্তে আস্তে সকাল পেরিয়ে দুপুর হয়ে গেলো কিন্তু আমরা কোন খাবারই খেলাম না। কুল্লুতে গাড়ির জানালা দিয়ে উঁচু নিচু পাহাড়,নদী আর প্রকৃতি দেখে খুব ভালো লাগছিলো। ভারতের উত্তরের হিমাচল প্রদেশের কুল্লু জেলার বিয়াস নদীর উপতক্যায় অবস্থিত একটি অপূর্ব পাহাড়ি শহরের নাম মানালি (Manali)। পৌরাণিক দেবতা মনুর নাম অনুসারে মানালির নামকরণ করা হয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত মানালিতে আসা-যাওয়ার রাস্তাটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মোটরওয়ে হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। উঁচু-নিচু পাহাড়, নদী আর অপরুপ প্রকৃতি হানিমুন এবং শুটিং স্পটের জন্য বিখ্যাত মানালিকে দিয়েছে ‘পৃথিবীর স্বর্গ’ বা ‘ধারতি কা সওয়ার্গ’ নামের সুখ্যাতি।

    বলিউড, কলকাতা সহ ভারত (India) এর অসংখ্য ছবির শুটিং করা হয়েছে মানালিতে। নৈস্বর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি মানালিতে পর্যটকদের মুগ্ধ করার মতো অসংখ্য জায়গা রয়েছে। যেমন–রোথাং পাস,সোলাং ভ্যালী, হিড়িম্বা দেবী মন্দির,বন বিহার,রেহালা জলপ্রপাত,গুলাবা,বিয়াস নদী,কুল্লু,মান্ডি প্রভৃতি।

    মানালিতে পৌঁছাতে আমাদের দুপুর ৩টা বেজে গেলো। আর প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিলো। মানালিতে এসে আমাদের মন খারাপ হয়ে গেলো কারণ চারপাশে পাহাড় আর হোটেল। কোথাও কোন বরফ নেই। আমি মনে মনে ভাবলাম এতো কষ্ট করে এতো দূর এলাম। আর এখানে বরফ পড়ছে না। এদিকে মন খারাপ, তার উপর পেটে খিদে,শরীরে ক্লান্তি। সব মিলিয়ে একদম যা তা অবস্থা। যাইহোক আমরা হোটেল মানালি ক্রাউনে উঠে ফ্রেশ হয়ে হোটেলের নিচেই দুপুরের খাবার খেলাম,ম্যানুতে ছিলো আলু কাবলি,পনিরের তরকারি, রুটি,চিকেন, ভাত। কেউই ভালো করে খেতে পারিনি কারণ সবাই অনেক অসুস্থবোধ করছিলো ও খাবারও তেমন মজা লাগেনি। এরপর দেখি আপুর প্রচন্ড জ্বর,মাথাব্যথা।

    পরে গাড়িতে কোনমতে ড্রেস চেইঞ্জ করে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আসলে ভালো মন্দ মিশিয়ে আমাদের মানালিতে বরফ দেখার ভ্রমণ অসাধারণ স্মৃতি হয়ে থাকবে।

    আপু বিছানায় শুয়ে পড়লো। দুলাভাই বললো,মানালি থেকে গাড়ি দিয়ে দিল্লি বা কলকাতায় যাওয়া অসম্ভব,কারণ উনার নাকি অনেক কষ্ট লেগেছিলো,উনি ট্রেন বা প্লেনে করে ফিরে যাবেন। তাই উনি ট্রেন বা প্লেনের টিকেট কাটাতে হোটেল থেকে বের হয়ে গেলেন যদিও পরের দিনের কোন টিকেট পাননি দুলাভাই। অবশেষে আমাদের গাড়িতে করেই দিল্লিতে ফিরে যেতে হয়েছিলো। আমি আর কি করব? আমি তিশমা,জাইমাকে নিয়ে হোটেল থেকে বের হয়ে গেলাম বাইরের আশেপাশের প্রকৃতি দেখার জন্য। ড্রাইভারকে বললাম, আমাদের একটু আশেপাশের এলাকা ঘুরিয়ে নিয়ে আসার জন্য। ড্রাইভারও বললো,আজকে আর পারবে না কারণ তিনিও ক্লান্ত,আগামীকাল সকালে ঘুরতে নিয়ে যাবে। পরে আমি আলাদা ট্যাক্সি ভাড়া করে ট্যাক্সিওয়ালাকে বললাম আশেপাশের কোথাও থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসার জন্য।

    মানালি শহরের গা ঘেঁষে বয়ে চলেছে বিয়াস নদী। মানালি থেকে পাহাড়ি আঁকা-বাঁকা সুন্দর রাস্তা ধরে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা সেখানে পৌঁছালাম। সেখানে গিয়ে আমি জিপলাইন রাইডে চড়লাম। অনেক ছবি তুললাম ও ভিডিও করলাম। এরপর আমরা হোটেলে ফিরে আসলাম, রাতও হয়ে গেলো,এসে দেখি তিশমারও জ্বর চলে এসেছে। এবার আমি জাইমাকে নিয়ে বাইরে গিয়ে কিছু খাবার আর মাথা ব্যাথা ও জ্বরের ঔষধ নিয়ে আসলাম। এরপর আপু, তিশমার জ্বর একটু কমলে রাতের খাবার খেয়ে আসলাম হোটেলের নিচে গিয়ে। এরপর দিন খুব ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে হোটেলের নিচে এসে দেখি হোটেলের বাইরে, পাহাড়ের গায়ে সাদা সাদা বরফ পড়ে আছে। মন খুশিতে ভরে উঠল,সারারাত বৃষ্টি হয়ে এখন গুড়ি গুড়ি বরফ পড়ছে। খুশিতে আমি লাফালাফি শুরু করে দিলাম।

    হোটেলের নীচে খাবারের অর্ডার দিলে তারা বললো,নাস্তা তৈরী করতে আরও একঘন্টা লাগবে। তাই আমরা হোটেল থেকে বের হয়ে গেলাম। বের হয়ে রাস্তার পাশে চা,বিস্কুট, সিদ্ধ ডিম,পাউরুটি টোস্ট বিক্রি করছিলো। আমরা সেগুলো দিয়ে নাস্তা খাচ্ছিলাম রাস্তায় দাঁড়িয়ে আর গুড়ি গুড়ি বরফ পড়ার দৃশ্য উপভোগ করছিলাম। কি যে ভালো লাগছিলো! এরপর হোটেলে গিয়ে আমাদের মালামাল নিয়ে আবার গাড়িতে উঠে সোলাং ভ্যালির দিকে রওনা দিলাম।

    পথে ড্রাইভার আমাদের একটা দোকানে নিয়ে নামালো,বললো,এখাম থেকে ড্রেস ভাড়া করেন, সোলাং ভ্যালিতে বরফে যাওয়ার জন্য। আমরা বললাম আমাদের ড্রেস লাগবে না,বললো যেসব ড্রেস পড়ে আছি,এগুলো দিয়ে বরফে যাওয়া যাবেনা। ড্রেস ভাড়া নিতে হবে। কি আর করা,আমরা গাড়ি থেকে নেমে সবার সাইজ অনুযায়ী ড্রেস ও জুতা ভাড়া করলাম। কিন্তু মোজা আমাদের কাছে বিক্রি করলো। তাড়াহুড়োতে আমাকে যে দুই পায়ে দুই রকম মোজা দিয়েছে তখন খেয়ালই করিনি। পরে খেয়াল করার পর ড্রেস ফেরত দিতে গিয়ে বললে, ওরা কিছুতেই তাদের ভুলের কথা মানছিলোনা,এই ব্যাপারটা আমার কাছে খুবই খারাপ লেগেছিলো। বরফে রাইডে চড়ার জন্য এই দোকানেই আমরা টাকা দিয়ে সব ঠিক করে গিয়েছিলাম যে বরফে আমরা কোন কোন রাইডে চড়ব।

    মানালি থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে রয়েছে সোলাং ভ্যালী। রোথাং পাস যাওয়ার পথ ধরেই এখানে যাওয়া যায়। এডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য এখানে আছে প্যারাসুটিং, প্যারাগ্লাইডিং, স্কেটিং, জরবিং , বাঞ্জি ও জীপ লাইনের মতো নানা রকম বিনোদনের আয়োজন। প্রতিটি রাইডের জন্য জনপ্রতি ৪০০ রুপির মত খরচ করতে হবে। এখানে সাদা বরফে ঢাকা বিশাল বিশাল পাহাড়ের সারির মাঝে জিপলিং,লংজিপারে ও টবগ্যানিং করার মজাই অন্যরকম। আমি প্যারাসুটিং, স্কেটিং ছাড়া সব রাইডে উঠেছি।

    সোলাং ভ্যালিতে যাওয়ার পথে রাস্তার আশেপাশের বরফ দেখে এতোদূরে কষ্ট করে আসার ক্লান্তি নিমিষেই শেষ হয়ে গিয়েছে, সবাই আমরা সুস্থ হয়ে গিয়েছি। দুলাভাই, আপুও অনেক খুশি হয়েছে। তিশমা,জাইমা,আর আমারতো খুশির সীমা ছিলো না। শুধু কি বাস্তবে বরফ,সাথে আকাশ থেকে বাস্তবে স্নো ফল দেখলাম। মনে হলো আল্লাহর কি অপূর্ব সৃষ্টি! পৃথিবীর কোথাও সবুজে ঘেরা,নদী,সমুদ্র, পাহাড়,কোথাও মরুভূমি, কোথাও বরফ,কোথাও বরফের বৃষ্টি, কোথাও পানির বৃষ্টি, কোথাও বালুর বৃষ্টি। আল্লাহর কাছে হাজার শোকর সব দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন আল্লাহ আমাকে। সব রাইডে চড়ে,আমরা বরফ দিয়ে ছোড়াছুড়ি করে খেললাম,আবার বরফ দিয়ে স্নোম্যান বানালাম। অনেক ছবি তুললাম,ভিডিও করলাম।

    দেখতে দেখতে দুপুর হয়ে গেলো। প্রচন্ড খিদেও লাগলো। এদিকে প্রচুর স্নো ফল হচ্ছিলো। যেখানে আমরা বরফের মধ্যে ছিলাম সেখানে পাউরুটি ওমলেট,নুডুলস ও কফি বিক্রি করছিলো। আমরা সেখানে দুপুরের খাবার খেয়ে নিয়ে নিলাম। বরফের মধ্যে স্নো ফলের মধ্যে গরম গরম খাবার খেতে কিযে মজা লাগছিলো! সে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এরপর বিকেল ৪ টায় আমরা সেখান থেকে দিল্লির উদ্দেশ্যে গাড়িতে উঠে পড়লাম। পথে ভাড়া করা ড্রেসগুলো ফেরত দিলাম। এরপর যাত্রাপথে কুল্লুতে দেখতে ফেলাম শহরের গা ঘেঁষে বয়ে চলেছে নদী।

    এডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য ঠাণ্ডা হিম শীতল পানিতে মাঝে মাঝে পাথরের মধ্য দিয়ে রাফটিং করার সকল আয়োজন আছে এই নদীতে। সাথে সাথে আমরাও গাড়ি থেকে নেমে রাফটিং করলাম। রাফটিং করে আমাদের ড্রেস একদম ভিজে গিয়েছিলো। পরে গাড়িতে কোনমতে ড্রেস চেইঞ্জ করে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আসলে ভালো মন্দ মিশিয়ে আমাদের মানালিতে বরফ দেখার ভ্রমণ অসাধারণ স্মৃতি হয়ে থাকবে।

    Featured ফারজানা ইয়াসমিন
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email

    সম্পর্কিত লেখা

    বামিহাল সাহিত্য পুরস্কার-২০২৪ পাচ্ছেন ৭ জন

    ডিসেম্বর ২১, ২০২৪

    চিন্তাসূত্র সাহিত্য পুরস্কার গ্রহণ করলেন ৪ গুণীজন

    ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪

    বগুড়া লেখক চক্র পুরস্কার-২০২৪ পাচ্ছেন অনীক মাহমুদসহ ৬ জন

    নভেম্বর ১৪, ২০২৪

    ৩ Comments

    1. Farhana Tasmin on মার্চ ২৫, ২০২৩ ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

      মালানিতে বরফ কুচির শুদ্ধজলে ভ্রমণ অভিজ্ঞতা পড়ে খুব ভালো লাগলো।

      Reply
    2. Tafannum Tasnim Zaima on মার্চ ২৫, ২০২৩ ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

      I like it your story is really interesting and amazing love it super. ❤️✨

      Reply
    3. Farhana Tasmin on মার্চ ২৫, ২০২৩ ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

      মানালিতে বরফ কুচির শুদ্ধজলে লেখাটি অসাধারণ হয়েছে

      Reply

    Leave A Reply Cancel Reply

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    দৃশ্যান্তের পর ॥ মাজরুল ইসলাম

    নভেম্বর ২৪, ২০২৩

    লিওনেল মেসি ॥ প্রিতময় সেন

    নভেম্বর ৬, ২০২৩

    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-মন্বন্তর: নাট্যচর্চায় বিজন ভট্টাচার্য ॥ তপন মণ্ডল

    আগস্ট ৫, ২০২৩

    বসন্ত রাগ ॥ কালিদাস ভদ্র

    জুলাই ১৬, ২০২৩

    একাকীত্বের সব দহন তোমাকে দিলাম ॥ দীপংকর গৌতম

    জুলাই ৪, ২০২৩
    Stay In Touch
    • Facebook
    • Twitter
    • Pinterest
    • Instagram
    • YouTube
    • Vimeo
    Don't Miss

    পুনর্জীবনে ফিরে ॥ নাসরীন জাহান

    ছোটগল্প মার্চ ১৪, ২০২৫

    ফিসফিস ধ্বনি, এই বাড়িডা না? ধুস আওলা ঝাউলা লাগতাছে… লোকটার দুই পা ফেটে রক্ত ঝরছে।…

    জীবিত ও মৃত: রবীন্দ্রদৃষ্টিতে সমাজে নারীর অবস্থান ॥ জান্নাতুল যূথী

    জানুয়ারি ২১, ২০২৫

    বামিহাল সাহিত্য পুরস্কার-২০২৪ পাচ্ছেন ৭ জন

    ডিসেম্বর ২১, ২০২৪

    চিন্তাসূত্র সাহিত্য পুরস্কার গ্রহণ করলেন ৪ গুণীজন

    ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪

    Subscribe to Updates

    Get the latest creative news from SmartMag about art & design.

    সম্পাদক: জান্নাতুল যূথী ইমেইল: jannatuljuthi646@gmail.com

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.